শুক্রবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০০৯

কোন পথে এগুচ্ছে রাজনীতি?

সংসদ সমাচার
কোন পথে এগুচ্ছে রাজনীতি? নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশনেই সরকারী দলের আচরণে ক্ষুব্ধ বিরোধী দল সংসদের অধিবেশন বর্জন করছে। সামনের আসনে বিরোধী দলকে মাত্র কয়েকটি আসন ছেড়ে দিতে সরকারি দলের এত আপত্তি কেন তা বোধগম্য নয়।
বিএনপির মত এতবড় একটি দলের সংসদে মাত্র ৩০টি আসন রয়েছে। নির্বাচনের ফলাফলে তারা বিস্মিত ও হতাশ। তারও মাঝে বিএনপি সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় দেশের গণতান্ত্রিক জনগণের মাঝে একটু স্বস্তি ফিরে এসেছিল। এমতাবস্থায় সরকারি দল আওয়ামী লীগের উচিত ছিল বিরোধী দলকে একটু ছাড় দিয়ে হলেও সংসদকে কার্যকর ও প্রানবন্ত করা। কিন্তু তার সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে সে উদারতা দেখাতে পারেনি। যাতে দেশের প্রত্যেকটি সচেতন নাগরিকই হতাশ হওয়ার কথা।

ট্রানজিট ইস্যু
প্রতিবেশী দেশ ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার প্রক্রিয়া খুব জোরে সোরেই এগুচ্ছে। খুব শিগগিরই বাংলাদেশ সফরে আসছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রনব মুখার্জি। আওয়ামী ঘরানার সুশীল সমাজও ট্রানজিট প্রদানের যথার্থতা তুলে ধরে মিডিয়ায় বক্তব্য রাখতে শুরু করেছেন। বিশ্বখ্যাত নিউজ উইকও তার প্রতিবেদেনে বলেছে- ‌‌'দিল্লীপ্রীতির কারণে ভারতের অনুরোধ হয়তো মেনে নেবে আওয়ামী লীগ'। সব কিছু মিলিয়ে ভারতকে ট্রানজিট ও গভীর সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করতে দেয়ার একটা সিদ্ধান্ত হয়তো খুব শিগগীরই নেবে ভারত।
অন্য দিকে, বিরোধী দল বিএনপি-জামায়াতসহ ডান ব্লকের দলগুলো এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করবে এটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছুটা অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ার ব্যাপক আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। ট্রানজিট ইস্যুটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই সেনসেটিভ। এর আগেও এধরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু বিরোধী দলগুলোর শক্ত অবস্থানের কারণে সেটা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এবার তেমন কোন শক্ত বিরোধী দল না থাকায় আসলে কী অবস্থা হবে তা বলা একটু কঠিন।

বুধবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০০৯

ক্যাম্পাস আড্ডাঃ প্রেক্ষাপট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


“কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই
কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী বিকেলগুলো সেই···············”।
এ গানটি ভালোভাবে শুনলে ক্যাম্পাস আড্ডার একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যাবে। ক্যাম্পাস থাকবে অথচ আড্ডা থাকবে না এটা ভাবাই যায় না। আরেকটু আগ বাড়িয়ে বললে বলতে হয়, যে ক্যাম্পাসে আড্ডা নেই সেটি আসলে কোন ক্যাম্পাসই নয়। বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজ থেকে যারা ডিগ্রী নিয়ে বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, আড্ডার কথা বললেই তারা আজও হারিয়ে যান অতীতের সেই স্বপ্নের ক্যাম্পাস জীবনে। তাদের মনের দুয়ারে উঁকি দেয় ক্যাম্পাস জীবনের অসংখ্য ঘটনা। আর বর্তমান শিক্ষার্থীদের কথা নাইবা বললাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করবে অথচ আড্ডায় অংশ নেবে না এমন শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন।
মনের যাবতীয় সুখ কিংবা দুঃখ একে অপরের সাথে ভাগাভাগি করে মনকে হালকা করার এক অনন্য মাধ্যম এ আড্ডা। আড্ডা বিনোদনের একটা চমৎকার মাধ্যম। এর মাধ্যমে অর্জন করা যায় নিত্য-নতুন অভিজ্ঞতা। জ্ঞানের রাজ্যকে করা যায় সম্প্রসারিত। বিভিন্ন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার একটা অনুশীলন হয় আড্ডার মাধ্যমে। বিভিন্ন জনের নানা অভিজ্ঞতার কথা শুনে শুনে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলিকে সমৃদ্ধ করার সুযোগও পাওয়া যায় এতে।

রকমারী আড্ডাঃ
ক্যাম্পাসের আড্ডার রয়েছে রকমফের। সব আড্ডা এক ধরণের নয়। এর রয়েছে বহুমূখিতা। সকালে আড্ডা, বিকেলে আড্ডা, রাতে আড্ডা, ঘুমাতে গিয়ে আড্ডা। আড্ডার আর অন্ত নেই। সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তার সাথে সাথে আড্ডা। তারপর পত্রিকা রূমে পত্রিকা পড়তে পড়তে প্রকাশিত খবর নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা আর নানা ধরণের মন্তব্য। এরপর ক্লাসে যাওয়া। আর ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে আড্ডা। স্যার ক্লাসে না আসলে তো মহাখুশি। ক্লাসে কিংবা বাইরে বসে বন্ধুরা সবাই মিলে জম্পেস আড্ডা। ক্লাস শেষে হলে ফিরে আসা। দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম। বিশ্রাম করতে করতে রূমমেটদের সাথে আড্ডা। আবার বিকেলে ঘুরতে বের হওয়া। বন্ধুদের সাথে ঘোরা-ফেরা কিংবা কোথাও বসে আড্ডা। তবে বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা একটু ব্যতিক্রম। তাদেরকে আবার দুপুরের পর ল্যাব কিংবা প্রাকটিকাল ক্লাস করতে হয়। তারা সাড়ে চারটা পাঁচটার পর থেকে ঘোরাফেরা ও আড্ডায় অংশ নেয়। এরপর রাত আটটা নয়টার দিকে হলে ফিরে এসে রাতের খাবার খাওয়া। খেয়ে দেয়ে একত্র হয়ে কার্ড খেলা কিংবা কম্পিউটারে সিনেমা অথবা নাটক দেখা। এভাবেই কেটে যায় ক্যাম্পাসের স্বপ্নিল দিনগুলো। প্রশ্ন জাগে, তাহলে কি কেউ পড়াশুনা করে না? হ্যা অবশ্যই করে। তবে তা আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে। তাছাড়া যারা ভালো রেজাল্ট করে তারা পড়াশুনার জন্য বিশেষ বিশেষ সময়
বের করে নেয়।

কি আলোচনা হয় এতে?
কি আলোচনা হয় না এতে? প্রেম-ভালোবাসা, কাস-পরীক্ষা, রাজনীতি- অর্থনীতি, সাহিত্য -সংস্কৃতি আরও কত কি? দোস্ত, ঐ মেয়েটা দেখতে পেঁচার মত তাই না? হাটাটা মনে হয়, ‘ব্রেক ড্যান্স’। চাহনিটা একেবারে বিড়ালের মত। আবার ধরুন, ‘কোপা শামছু’ ছবিতে নায়িকাকে এতটা হেয় করা ঠিক হয়নি। আবার, দোস্ত, তোর ড্রেসটা না একেবারে ঝাক্কাস! ঠিক যেন চৌকিদার- এরকম নানা মন্তব্য ও সমালোচনা। আবার ক্লাসের পড়াশুনা ও পরীক্ষা নিয়েও আলোচনা হয় কোন কোন আড্ডায়। আলোচনায় উঠে আসেন স্যাররাও। বিভিন্ন উপাধিতে অভিহিত করা হয় তাদেরকে। সমাজ বিজ্ঞান কিংবা কলা অনুষদের স্যারদেরকে এরিস্টটল, সক্রেটিস, সেন্ট অগাস্টিন, কার্ল মার্কস, লেলিন, সোফিস্ট প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত করা হয়। আবার বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকদের আইনস্টাইন, ডারউইন, নিউটন, স্টিফেন হকিং প্রভৃতি নামে অভিহিত করা হয়। তাছাড়া ডিপার্টমেন্টে আসার সময় স্যাররা কোন ধরণের পোষাক পরে আসলেন তারও চুলচেঁরা বিশ্লেষণ করা হয়। যেমন- আজকে অমুক স্যারকে নায়ক চিকন আলীর ন্যায় মনে হচ্ছে। স্যারের শার্টটা একেবারে বাচ্চাদের শার্টের ন্যায় ঝকমকা ইত্যাদি।
রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টদের আলোচনা বিষয় থাকে, কাকে কিভাবে ‘ল্যাং মেরে ঠ্যাং’ ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে, আগামী দিন কাকে ‘সাইজ’ করা হবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। এছাড়া রাজনীতির নানা বিষয় তো থাকেই।
তবে অনেকে আবার শিক্ষামূলক বিভিন্ন আড্ডায় নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখতেই বেশি পছন্দ করেন। তারা একাডেমিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা পর্যালোচনার মাধ্যমে নিজেদের জানাশোনার পরিধিকে প্রসারিত করতে চেষ্টা করেন। জেনারেল নলেজ ফোরাম, ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাবের সদস্যরা এ জাতীয় আড্ডায় বেশি অংশ নেন।

ক্যাম্পাস আড্ডার একাল সেকালঃ
আগেই বলেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে অথচ আড্ডায় অংশ নেয়নি এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে সময়ের পরিবর্তনে আড্ডার প্রকৃতিতেও এসেছে পরিবর্তন। আগের দিনে আড্ডাটা হত কাজের ফাঁকে ফাঁকে। আর বর্তমানে আড্ডাটাই একটা কাজে পরিণত হয়েছে। নব্বই-এর দশকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন আশিক রহমান। তাদের সময়ের ক্যাম্পাস আড্ডা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সময় ক্যাম্পাসে ছাত্র-ছাত্রী অনেক কম ছিল । তখন ক্যাম্পাসে আড্ডা দেয়ার জায়গাও ছিল কম। তবে ডেইরীসহ বেশ কিছু স্পটে বিকেলের দিকে আমরা আড্ডা দিতাম। ব্যক্তিগত বিষয়সহ নানা বিষয়ে আলোচনা হত এতে।
ডেইরীগেটের এক দোকানী জানালেন, আজ থেকে দশ বছর আগেও ছাত্র-ছাত্রীদের আড্ডায় ডেইরী গেট রাত দশটা-সাড়ে দশটা পর্যন্ত মূখর থাকত। কিন্তু বর্তমানে সাড়ে আটটার পরই এ জায়গাটা নির্জন হয়ে যায়। মনে হয় যেন রাত বারটা বেজে গেছে। তিনি বলেন, সম্ভবত এখন অনেক শিক্ষার্থীই ঢাকা কিংবা ক্যাম্পাসের আশেপাশে থাকে। এজন্য এখানে তেমন একটা ভিড় জমে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র রবিউল ইসলাম। অনেক আগেই ক্যাম্পাস ছেড়েছেন তিনি। তবে হৃদয়ের টানে মাঝে মাঝেই চলে আসেন প্রিয় ক্যাম্পাসে। তার সাথে কথা হচ্ছিল ক্যাম্পাস আড্ডা সম্পর্কে। তিনি বললেন, একালের আড্ডায় আলোচনার বিষয়বস্তুতেও এসেছে পরিবর্তন। একালের শিক্ষার্থীদের আলোচনায় একটা বড় স্থান দখল করে নেয় প্রেম-ভালোবাসা আর যৌনতা।

জাবি ক্যাম্পাসের আড্ডা স্পটঃ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৃতির অপরূপ এক লীলাভূমি। কাশ্মীরকে যেমন ভূ-স্বর্গ বলা হয় তেমনি এ ক্যাম্পাসকে বলা যেতে পারে বাংলাদেশের স্বর্গ। এর প্রতিটি ইঞ্চি জায়গাই সুন্দর ও মনোহর। যার বর্ণনা ভাষার মাধ্যমে সঠিকভাবে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সুতরাং এর সবখানেই হতে পারে আড্ডার স্পট। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠের চারপার্শ্বে প্রতিদিন বিকেলে অনেকগুলো আড্ডার দৃশ্য সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এছাড়া সকাল আটটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ক্যাফেটরিয়ায় দেখা যায় অনেকগুলো আড্ডার দৃশ্য। আবার ক্যাফেটরিয়ার সামনে নেসক্যাফের তৈরি কয়েকটি আড্ডাখানায় চলে রাত নয়টা-দশটা পর্যন্ত আড্ডা। প্রতিদিন বিকেলে আড্ডা বসে মুক্তমঞ্চ এবং টিএসসি এলাকায়। টিএসসি অধিভূক্ত সংগঠনগুলো রাত আটটা পর্যন্ত অনুশীলন আড্ডায় মাতিয়ে রাখে গোটা টিএসসি এলাকাকে।
এছাড়া কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়াম, শহীদ মিনার, অমর একুশের পাদদেশ, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী চত্ত্বর, ট্রান্সপোর্ট এলাকা, মুন্নী চত্ত্বর, ডেইরী গেট, প্রান্তিক গেট ও ক্যাম্পাসের ছোট-ছোট দোকানগুলো আড্ডায় মুখরিত থাকে প্রায় সারাণ।
জাবি ক্যাম্পাসে আড্ডার অন্যতম স্পট হচ্ছে ‘মেহেরচত্ত্বর’। বিশেষ করে ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদেরকে উচ্ছ্বল আড্ডা দিতে দেখা যায় এখানে। তাই অনেকে মেহেরচত্ত্বরকে ছাত্র রাজনীতির নিয়ন্ত্রনকেন্দ্র হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন।

আড্ডা সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা কে কি বলেন?
- শাহ জালাল প্রিন্স মাস্টার্স, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
আড্ডার কথা শুনলে অনেকেই এটাকে নেতিবাচক হিসেবে ধরে নেন। কিন্তু আড্ডার সবকিছুই নেতিবাচক নয়। এ থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে। নেতিবাচক জিনিসগুলো থেকে ইতিবাচক কিছু বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে।
- সিরাজুল ইসলাম দূর্জয় মাস্টার্স, ইতিহাস বিভাগ
আড্ডার মাধ্যমে আসলে অনেক কিছুই শেখা যায়। একটা পরিবেশে নিজেকে কিভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হবে তা এর মাধ্যমে আত্মস্থ করা যায়।
- রহমাতুল্লাহ স্নাতক (সম্মান) ২য় বর্ষ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
আড্ডা ক্যাম্পাস জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আড্ডা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় জীবন কল্পনা করা যায় না। বিভিন্ন বিষয় পরস্পর আলাপ-আলোচনার করে একটা সুন্দর ফলাফল বের করা যায় এর মাধ্যমে।
- শরীফ হোসাইন নাবিল স্নাতক (সম্মান) ৪র্থ বর্ষ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ
আড্ডার মাধ্যমে জানা শোনার পরিধিকে অনেক বেশি প্রসারিত করা যায়। ক্যাম্পাস জীবনে আড্ডার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে এর একটা সীমা থাকা উচিত। সাজ্জাদ বিপ্লব জাবি সংবাদদাতা, দি এডিটর ও দৈনিক বাংলাবাজার
ক্যাম্পাস সময়টি হচ্ছে জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যা বন্ধুদের সাথে আড্ডার মাধ্যমে উপভোগ্য হয়ে ওঠে। আড্ডার মাধ্যমে নিত্য-নতুন অভিজ্ঞতার দ্বারা নিজেকে সমৃদ্ধ করা যায়। আড্ডা ছাড়া ক্যাম্পাস জীবন অপূর্ণাঙ্গ থেকে যায়।
সামসুন্নাহার স্নাতক (সম্মান) ২য় বর্ষ, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ
আড্ডার মাধ্যমে আমাদের আনন্দগুলো পরস্পর ভাগাভাগি করে নিতে পারি। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্লাটফরম হচ্ছে আড্ডা।

নিজের প্রতি ভালোবাসা : সফল ও সুন্দর জীবনের চাবিকাঠি


আমাদের জীবনে আমরা অনেক জিনিসকেই ভালোবাসি, হোক সেটা ব্যক্তি কিংবা বস্তু। কিন্তু একট ভেবে দেখুন তো আপনি কোন জিনিসটিকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন? হয়তো বলবেন, বন্ধু-বান্ধবী, পিতামাতা, স্বামী/স্ত্রী ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার এ প্রশ্নের জবাবে প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভিন্ন ভিন্ন উত্তর দিয়ে তার কারণও ব্যাখ্যা করতে পারবেন। তবে ব্যক্তিগত উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গিতে আমি বলবো - আমরা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি নিজেকে। কোন এক মনিষী বলেছিলেন- ‘যদি আমরা নিজেদেরকে ভালো না বাসি তবে অন্য কেউ আমাদের ভালোবাসবে না’। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা অনেক কারণেই নিজেরা নিজেদেরকে ভালোবাসতে সক্ষম হই না। ফলে অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও জীবনে উন্নতি লাভ করতে আমরা ব্যর্থ হই।
যাই হোক, এবার তাহলে আসুন জেনে নেই নিজেকে ভালোবাসার কয়েকটি গোপনসূত্র।

নিজেকে ভালোবাসার ৫টি পদ্ধতি
১. নিজেকে অভিনন্দন জানান এবং পুরস্কৃত করুন:
আমরা অনেক সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করি। সেটা হতে পারে ছোট কিংবা বড়। এ সময় আমাদের উচিত নিজেদেরকে অভিনন্দন জানিয়ে পুরস্কৃত করা। এবং এ পুরস্কারটি হওয়া উচিত উচ্চমানের। ধরুন আপনি কোন ক্ষেত্রে সফলতার কারণে সিলভার কিংবা ব্রোঞ্জ মেডেল পেলেন। এক্ষেত্রে আপনি নিজেকে ব্রোঞ্জ বা সিলভার মেডেল না দিয়ে সোনার মেডেল প্রদান করুন। এভাবে নিজের সফলতায় আপনি নিজের কাছ সর্বোচ্চ সম্মানটিই গ্রহণ করুন।

২. নিজের যা আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকুন :
পৃথিবীতে অনেক লোক আছেন যারা সারা দিন নিজের যেটা নেই কিংবা স্বীয় দুর্বলতা অথবা যা তিনি করতে পারেন না সেটা নিয়েই বেশি চিন্তা করে অধিকাংশ সময় নষ্ট করে ফেলেন। ফলে নিজের যা আছে তারও সঠিক ব্যবহার করতে পারেন না।
অপরদিকে এমন লোকও আছেন যারা নিজের যেসব উপায় উপকরণ কিংবা গুণাবলী আছে তার যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে জীবনে সফলতা অর্জন করেন। সুতরাং আপনি প্রথম দলের অন্তর্ভূক্ত না হয়ে শেষোক্ত দলের অন্তর্ভূক্ত হন।

৩. অপ্রয়োজনীয়ভাবে নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করবেন না:
একটি বিষয় সব সময় মনে রাখবেন যে, আপনি স্বীয় ক্ষেত্রে অনন্য। অনেক লোক আছেন যার তার চেয়ে অনেক উচ্চ পর্যায়ের লোকের সাথে নিজেকে তুলনা করেন। আর ভাবেন- ঐ লোক কত সুন্দরভাবে কাজ করতে পারেন কিংবা অনেক বেশি জানেন ; আমি তার মত কোন দিনই পারব না ইত্যাদি, ইত্যাদি। আপনি কখনো এসব ভাবনার লোকদের মত হবেন না। কেননা এভাবে ভাবলে আপনি আপনার নিজস্ব দক্ষতাকেই ছোট করবেন। সুতরাং বাস্তববাদী হোন এবং এধরণের অপ্রয়োজনীয় তুলনা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।

৪. নিজের যত্ন নিন:
জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা ব্যর্থতাসহ নানা সমস্যার মুখোমুখি হই। এ রকম পরিস্থিতিতে আমাদের উচিত নিজেদের প্রতি আরও বেশি যত্নবান হওয়া এবং নিজেকে বেশি বেশি ভালোবাসা। এমনকি পৃথিবীর ৬শ’ কোটি লোক আপনাকে ঘৃণা করলেও আপনার উচিত নিজেকে ভালোবাসা। একটি মনে রাখবেন, নিজেকে যত বেশি ভালোবাসবেন, আপনি তত বেশি সুখী ও সফল ব্যক্তিত্বে পরিণত হবেন। তেমনিভাবে নিজেকে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুন্দর আবস্থায় রাখুন। নতুবা রাগ, ক্রোধ ও দুশ্চিন্তার মত নেতিবাচক আবেগগুলো আগুনের ন্যায় ছড়িয়ে পড়ে অল্প সময়ের মধ্যেই আপনার জীবনকে ধ্বংস করে দেবে।

৫. নিজেকে সুন্দরভাবে উস্থাপন করুন:
আরেকটি বিষয় সবারই মনে রাখা উচিত যে- আপনার কর্মকান্ড, জীবনপদ্ধতি, মতামত ইত্যাদি আপনার মনের গভীরে লালিত চিন্তা ও বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটায়। সুতরাং নিজের মনে ইতিবাচক চিন্তা লালন করুন এবং নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করুন। আপনি যদি জীবনকে ইতিবাচকভাবে দেখেন তবে সবকিছুই সঠিকভাবে হবে নতুবা সব কিছুই দেখতে পাবেন আপনার চিন্তা ও মতের বিপরীত।

কারেন্ট ইস্যু : সর্বশেষ সংযোজন

Current Issue Forum Headline Animator

Current Issue Forum