শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল, ২০০৯

পুলিশের মহানুভবতা বনাম দায়িত্ব

২৩ এপ্রিল বাংলাদেশের একটি খ্যাতনামা দৈনিকের ভেতরের পাতার একটি সংবাদ শিরোনামে চোখ আটকে গেল। বক্স আইটেম করে ছাপানো সংবাদটির শিরোনাম ‘পুলিশ কর্মকর্তার মহানুভবতায়-’। সংবাদটি শুরু করা হয়েছে ঠিক এভাবে “মানুষ, মানুষের জন্য। আবার তা প্রমাণ করলেন মিরপুর বিভাগের উপ কমিশনার আনোয়ার হোসেন।.....”। সংবাদে বলা হয়েছে, আশুলিয়া থানার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম, সারা রাত ধরে স্ত্রীর ওপর অমানবিক নির্যাতনের পর বিবস্ত্র অবস্থায় তাকে ঘর থেকে বের করে গাড়ির চালক মতিউর রহমানের হাতে তুলে দেয়। গাড়ির চালকও মহিলাটিকে নিয়ে ঢাকায় আসার পথে তার ওপর নির্যাতন চালায় এবং শ্লীলতাহানি করে।
গাড়িটি গাবতলীতে পৌঁছলে ঐ মহিলা আত্মরক্ষার জন্য গাবতলি পুলিশ ফাঁড়িতে আশ্রয় নেয়। গাড়ির ড্রাইভারও তার পিছু নেয়। সেসময় আরেকজন ভদ্র মহিলা এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট পত্রিকা অফিসে ফোন করে জানালে পত্রিকার পক্ষ থেকে মিরপুর বিভাগের পুলিশ কমকর্তা আনোয়ার হোসেনকে জানিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করা হয়।
পরবর্তীতে পুলিশের ঐ কর্মকর্তা দারুস্ সালাম পুলিশকে মহিলার চিকিৎসাসহ জড়িতদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দিলে পুলিশ ড্রাইভারকে আটক করে এবং ঐ মহিলাকে একটি কাপড় কিনে দেয়। তাছাড়া অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। চিকিৎসা শেষে তার ইচ্ছা অনুযায়ী নিরাপদ স্থানে পৌছে দিয়ে আসে। মহিলার স্বামীকেও গ্রেফতারের চেষ্টা করছে পুলিশ।
এতক্ষণ ধরে ঘটনাটির যে বিবরণ দিলাম সেটি সবাইকে জানানো আমার লক্ষ্য নয়। আমার লক্ষ্য ভিন্ন। এবার সে বিষয়ে বলছি। পত্রিকাটি তার শিরোনামে লিখেছে- ‘পুলিশ কর্মকর্তার মহানুভবতায়-’। পুলিশের এই কর্মকর্তা কিংবা পুলিশ যা করেছে, তা কি আসলে মহানুভবতা? তাহলে পুলিশের দায়িত্ব কী? একজন অসহায় নারীকে রক্ষা করতে পুলিশ এগিয়ে আসবে এটাই তো স্বাভাবিক। একজন নাগরিকের জান মাল রক্ষা করাই তো পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এখানে মহানুভবতার কী আছে? আসলে পুলিশ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা যা করেছেন এটা করা ছিল তাদের দায়িত্ব।
বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী নিয়ে বহু বিতর্ক হয়েছে এবং হচ্ছে। ব্রিটিশ আমল থেকে পুলিশকে ব্যবহারের পদ্ধতির কারণে এটি আসলে জনগণের রক্ষাকর্তা কিংবা বন্ধু হিসেবে গড়ে ওঠেনি। বরং বিভিন্ন সময় সরকারকে দেখা গেছে এই বাহিনীকে জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে ব্যবহার করতে। ফলে ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর মানসিক দূরত্ব।
ছোট বেলায় দেখতাম, যখন ছোটরা দুষ্টুমি করত তখন বড়রা পুলিশের ভয় দেখাতো। তার মানে তখনও জন সাধারণের মনে পুলিশ মানে আতঙ্কের কোন জীব হিসেবে বিবেচিত হতো। বর্তমানেও গ্রামাঞ্চলে এ অবস্থার খুব বেশি উন্নতি হয়নি। এখনও কোনো বাড়িতে পুলিশ আসলে আশে পাশের বাড়ির অনেকে আতঙ্কে নীরব হয়ে যায়। তাছাড়া পুরো গ্রামে নানা কথাবার্তা ছড়িয়ে পড়ে ঐ বাড়ি সম্পর্কে।
যাই হোক, পুলিশ বাহিনীকে জনবান্ধব তথা জনগণের প্রতি বন্ধুসুলভ হিসেবে গড়ে তোলার যে উদ্যোগ বিগত সময়ে নেয়া হয়েছিল তার দ্রুত পূর্ণ বাস্তবায়ণ হোক আমরা সে কামনাই করি। পুলিশ জনগণের বন্ধু হলে এ ধরণের ঘটনাকে আমাদের আর মহানুভবতা বলে আখ্যা দিতে হবে না। বরং এর চেয়েও আরও অনেক বড় মহানুভবতাকে (!) আমরা পুলিশের দায়িত্ব হিসেবে দেখতে পাব। সেই দিনের প্রত্যাশায় আছি। আর দাবি করছি উপরোক্ত ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দোষীদের শাস্তি।

কারেন্ট ইস্যু : সর্বশেষ সংযোজন

Current Issue Forum Headline Animator

Current Issue Forum